Header Ads

ঈমান পরীক্ষার উপায়

শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
খতিব, বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ

আল্লাহকে হাকিম ও বিধানদাতা মেনে নিতে আমার মনে কোনপ্রকার দ্বিধা- সংকোচ নেই তো?
এক তো হচ্ছে বর্তমানকালের বাস্তবতা যা আমাদেরই কর্মফল যে, ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশ এমন নেই যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী বিধান কার্যকর, কিন্তু মুমিনমাত্রের জানা আছে যে, মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত অবস্থা এ নয়, মুসলিম উম্মাহ তো পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও শরীয়তের অধিকারী। যাতে বড় একটি অংশ রয়েছে রাজ্য-শাসন বিষয়ক। উম্মাহর নেতৃত্ব ও পরিচালনা যাদের উপর ন্যস্ত তাদের ফরয দায়িত্ব ঐ নীতি ও বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, আমর বিল মারূফ, নাহি আনিল মুনকার (সকল মন্দের প্রতিরোধ ও প্রতিাবদ), ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও 'খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ' (নববী আদর্শ অনুযায়ী যমীনে খেলাফত পরিচালনা করা)-এর দায়িত্ব পালন করা, ইসলামী হদ, কিসাস ও তাযীর (দণ্ডবিধি) কার্যকর করা, সাধ্যানুযায়ী ইসলামী জিহাদের দায়িত্ব পালন করা, রাষ্ট্র পরিচালনা (আইন-বিচার, নির্বাহী) এর ক্ষেত্রে নতুন- পুরাতন জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান এবং নতুন-পুরাতন সকল তাগূতি ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে ইসলামী বিধি-বিধানের আনুগত্য করা। এ হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা এবং এ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত অবস্থা:
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّلِحْتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّ لَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَ مَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفُسِقُوْنَ وَأَقِيمُوا الصَّلوةَ وَآتُوا الزَّکٰوةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ.
আব্দুল মালিক: মুফতিয়ে আজম বাংলাদেশ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীগণকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্য নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোনো শরিক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী। তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (আন নূর ২৪, ৫৫-৫৬)
الَّذِينَ إِنْ مَكَّتُهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلوةَ وَآتَوُا الزَّكُوةَ وَ آمَرُوا بِالْمَعْرُوْفِ وَ نَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ.
আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (সূরা হজ্ব ২২: ৪১)
يُدَاوُدُ إِنَّا جَعَلْنَكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি, কারণ তারা বিচারদিবসকে বিস্মৃত হয়ে আছে। (সূরা ছ-দ ৩৮ : ২৬)
وَ أَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفْسِقُونَ أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَ مَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَ النَّصْرَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَ مَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّلِمِينَ
কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি কর, তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ না কর এবং তাদের সম্বন্ধে সতর্ক হও যাতে আল্লাহ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখ যে, কোনো কোনো পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে বিপদাপন্ন করতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী। তবে কি তারা জাহেলী যুগের বিধিবিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধান দানে আল্লাহর চেয়ে কে শ্রেষ্ঠতর? হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (মায়েদা ৫: ৪৯-৫১)
এই আয়াতগুলোতে মুসলিম শাসকদের কর্তব্য এবং তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি দুই-ই রয়েছে। এই বাস্তবতা স্মরণ রাখলে জানা যাবে, কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে শাসকদের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষেত্র হচ্ছে, যেখানে কুরআন-সুন্নাহ নিশ্চুপ এবং ইজমায়ে উম্মত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের ঐকমত্যপূর্ণ ফয়সালায় যার নজির নেই। অন্যভাষায়, নবউদ্ভূত ইজতিহাদী প্রসঙ্গসমূহ, মোবাহ ক্ষেত্রসমূহ এবং ব্যবস্থাপনাগত বিষয়াদি (যা মোবাহ বিষয়াদিরই অন্যতম বড় অংশ)-এই তিনটি ক্ষেত্রেই মুসলিম শাসকদের আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হতে পারে এবং এর অবকাশও তাদের আছে। আর এর প্রথমটি অর্থাৎ নবউদ্ভূত ইজতিহাদী প্রসঙ্গসমূহের বিধানও সমসাময়িক ফকীহগণের উপর ন্যস্ত করা অপরিহার্য।
যেসব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত নির্দেশনা আছে সেখানে হুবহু ঐ শিক্ষা ও নির্দেশনার অনুসরণ করা ও তা কার্যকর করা জরুরি। এসব বিষয়ে নতুন আঙ্গিকে বিন্যাস ও সংকলনের কাজ হতে পারে, কিন্তু তা পরিবর্তন- পরিবর্ধনের কোনো সুযোগ নেই। তদ্রূপ সেসব থেকে বিমুখ হয়ে আলাদা আইন প্রণয়ন কিংবা তার স্থলে মানব রচিত (যে-ই হোক এর রচয়িতা) কোনো আইন গ্রহণের কোনো অবকাশ নেই। কেউ এমনটা করলে যদি নিজেকে অপরাধী মনে করে, অন্তরে আল্লাহর প্রতি, আখিরাতের প্রতি, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, তাঁর বিধান ও শরীয়তের প্রতি ঈমান থাকে, আর তার উপলব্ধি এই থাকে যে, আল্লাহর বিধান অনুসারেই রাজ্য পরিচালনা করা ফরয, এতেই আছে কল্যাণ ও কামিয়াবি কিন্তু ঈমানী কমযোরি ও বুযদিলির কারণে আমি তা করতে পারছি না। তাহলে অন্তরে ঈমান থাকার কারণে এবং ঐ হারাম কাজে নিজেকে অপরাধী মনে করার কারণে তার উপর কাফির-মুনাফিকের হুকুম আরোপিত হবে না। পক্ষান্তরে অবস্থা যদি এই হয় যে, আল্লাহর বিধান তার পছন্দ নয়, ইসলামকে সে ঘর ও মসজিদে আবদ্ধ রাখতে চায়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের নেতৃত্বে তার ঈমান নেই, আসমানী বিধিবিধানের উপর মানব রচিত আইন-কানুনের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই তার এই কর্ম ও অবস্থান সরাসরি কুফর। আর এই কুফরের সাথে কথায় বা আচরণে ঈমানের দাবি সরাসরি নিফাক ও মুনাফেকী।
রাব্বুল আলামীনের হুকুম পড়ুন:
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَ أَحْسَنُ تَأْوِيلًا أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَ مَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَ قَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَنُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَلًا بَعِيدًا وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنْفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًان.
হে মুমিনগণ যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে
ক্ষমতার অধিকারী; কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে তা পেশ কর আল্লাহ ও রাসূলের কাছে। এটাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর। তুমি তাদেরকে দেখ নাই যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। তাদেরকে যখন বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে তুমি তোমার থেকে মুখ একেবারে ফিরিয়ে নিতে দেখবে। (আন নিসা ৪: ৫৯-৬১)
'তাগূতে'র অর্থ আল্লাহর ঐ বিদ্রোহী বান্দা, যে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং মানুষের উপর তা কার্যকর করতে চায়।
প্রকৃতপক্ষে কোনো তাগূত ব্যক্তি বা দলের বানানো আইন-কানুন হচ্ছে সত্য দ্বীন ইসলামের বিপরীতে বিভিন্ন 'ধর্ম', যা থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা ছাড়া ঈমান সাব্যস্ত হয় না। আল্লাহর বিরুদ্ধে কিংবা আল্লাহর সাথে তাগূতের উপাসা বা আনুগত্য করা কিংবা তা বৈধ মনে করা, তদ্রূপ আল্লাহর দ্বীনের মোকাবেলায় বা তার সাথে তাগূতের আইন-কানুন গ্রহণ করা বা গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা সরাসরি কুফর ও শিরক। তাগূত ও তার বিধি-বিধান থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়া ঈমানের দাবি নিফাক ও মুনাফেকী।
এই নিফাক থেকে বাঁচার ন্যূনতম উপায়, শাসক-জনগণ সকলেরই অন্তরে এই কামনা থাকা যে, হায়! আমাদের এখানে যদি ইসলামী বিধান কার্যকর হত! আমাদের দেশ ইসলামের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হত! অন্তত অন্তরেও যদি পূর্ণাঙ্গ ইসলামের ঈমান থাকে এবং ইসলামের রাজ্য চালনার নীতি ও বিধানের মর্যাদা-মাহাত্ম্য ও ভালবাসা অন্তরে বিদ্যমান থাকে তাহলে এটাও অনেক বড় ব্যাপার। এর জন্যও আল্লাহ তাআলার শোকরগোযারি করা কর্তব্য।
পক্ষান্তরে দিলের অবস্থা যদি এই হয় যে, নাউযুবিল্লাহ- আল্লাহকে হাকিম ও শাসক মেনে নিতেই দ্বিধা ও সংকোচ কিংবা অস্বীকৃতি থাকে, রাজনীতি ও রাজ্য চালনায় আসমানী বিধানের 'অনুপ্রবেশ' কেন-এই যদি হয় মনের কথা তাহলে নিশ্চিত বুঝতে হবে, অন্তর ঈমান থেকে শূন্য এবং ঐ লোক ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ। তাকে কুফর ও নিফাক থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করে খাঁটি মনে তওবা করতে হবে এবং ইসলামের পূর্ণতা, পূর্ণাঙ্গতা ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার অবশ্য অনুসরণীয় হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে পূর্ণ ইসলামে প্রবেশের মাধ্যমে ঈমানের নবায়ন করতে হবে, যাতে অন্তত ঈমানের পর্যায়ে আল্লাহ ও তার দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এরপর হতে পারে-যদি সদিচ্ছা থাকে-কখনো কর্মগত বিদ্রোহ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।
মনে রাখুন, হেদায়েত ও দ্বীনে হকের বিজয় কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকদের কাছে সহনীয় নয়। তাদের কাছে এটা খুবই অসহনীয় যে, শুধু আল্লাহর ইবাদত-দাসত্ব হবে এবং আল্লাহর কালিমা বুলন্দ হবে। মুসলিম উম্মাহর ঈমানী তারাক্কী এবং উম্মাহ হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠা ওদের কাছে চরম গাত্রদাহের কারণ। এখন যদি ইসলামের কালিমা পাঠ করেও আমার অবস্থা সেটাই হয় আর আমার বন্ধুত্বও হয় তাদের সাথেই তাহলে আমি কীভাবে ঈমানের দাবি করি? আমার আদর্শ তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ। কুরআন মজীদের বর্ণনায় তো তাঁদের অবস্থা এই-
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَ الَّذِينَ مَعَةَ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَابَهُمْ رُكَعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَيةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْهُ فَأَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَ عَمِلُوا الصَّلِحَتِ مِنْهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرًا عَظِيمًان
মাহম্মাদ আল্লাহর রাসূল; তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মাঝে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট থাকবে; তাওরাতে তাদের বর্ণনা এমন এবং ইনজিলেও তাদের বর্ণনা এমনই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা থেকে বের হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য আনন্দদায়ক। এই ভাবে আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধির দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের। (আল ফাতহ ৪৮: ২৯)
কাফির-মুশরিকদের এই ঘৃণা ও ক্রোধ অতীতেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে যে পর্যন্ত না তারা কুফর ও শিরক থেকে তওবা করে দ্বীনে হক কবুল করে। মুসলিম উম্মাহর ফরয-যদি নিজের ঈমান রক্ষা করতে হয়-ওদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করা। এরপর কেউ যদি ওদের বন্ধুত্ব থেকে প্রভৃত্বের আসনে
সমাসীন করে এবং নিজেদের আদর্শ বানিয়ে নেয় তবে তাদের অবস্থা তো কুরআন মজীদে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে-
يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَ اللهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَ لَوْ كَرِهَ الْكَفِرُونَ هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ.
তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকগণ তা অপছন্দ করে। -সূরা আসসফ ৬১: ৮-৯
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهَا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحْنَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ يُرِيدُونَ أَنْ يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكُفِرُونَ هُوَ الَّذِي أَرْ سَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَ دِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ
তারা আল্লাহ ছাড়া তাদের পন্ডিতগণকে এবং সংসারবিরাগীগণকে তাদের রব হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়াম তনয় মসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। তারা যাকে শরিক করে তা থেকে তিনি কত পবিত্র। তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নিভিয়ে দিতে চায়। কাফেররা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর জ্যোতির পূর্ণ উদ্ভাসন ছাড়া অন্য কিছু চান না। মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অন্য সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন। (আত তাওবা ৯: ৩১-৩৩)
হাদীসে আছে, ইয়াহূদ-নাসারা নিজেদের আহবার-রোহবানের উপাসনা করত না, এখনও করে না। তবে ওরা তাদেরকে হালাল-হারাম নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিল। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ওরা নিজেদের আহবার- রোহবানকে 'রব' হিসেবে গ্রহণ করেছে। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস: ৩০৯৫) অথচ 'রব' শুধু আল্লাহ; না তার রব-গুণে কেউ শরীক হতে পারে, না ইলাহ গুণে। এ কারণে যে কেউ আল্লাহর আহকাম-হুদূদ ও আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়তের বিপরীতে কারো জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার স্বীকার করে তবে সে সরাসরি শিরকে লিপ্ত হয় এবং বস্তুত ঐ ব্যক্তিকে নিজের 'রব' হিসেবে গ্রহণ করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বপ্রকারের কুফর ও শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দিন। আমীন।
                                                    (ঈমান সবার আগে, পৃ: ৬২-৬৮)




No comments

Powered by Blogger.