ম্যান্ডেলা আর্ট করা কি নাজায়েজ বা হারাম?
প্রশ্ন:
আমার প্রশ্ন ছিলো যে, ম্যান্ডেলা আর্ট করা কি নাজায়েজ বা হারাম? বা এটা অংকন করলে কি গুনাহ হবে? অনেকে বলছেন এটা নাকি আঁকা যাবে না এটা হিন্দুদের সিম্বল। কিন্তু আমি তো গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করে বা ফুল দিয়ে অংকন করি। এই ব্যাপারে ইসলামে কি বলে?
উত্তর:
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
উইকিপিডিয়ার তথ্যের ওপর নির্ভর করে আমরা ম্যান্ডেলা আর্ট সম্পর্কে যদ্দুর জেনেছি তাতে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে সেটা হলো, ম্যান্ডেলা আর্ট মূলত বিভিন্ন ধর্মের দেবতাদের প্রতিনিধিত্ব করে।
উইকিপিডিয়ায় যেমনটি বলা হয়েছে-
“মণ্ডল (সংস্কৃত: मण्डल) হল প্রতীকের জ্যামিতিক আকৃতি। আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে, অনুশীলনকারীদের ও পারদর্শীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য, আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার হাতিয়ার হিসেবে, পবিত্র স্থান প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ধ্যান ও সমাধি আবেশনের জন্য সাহায্য হিসেবে মণ্ডলগুলিকে নিযুক্ত করা যেতে পারে।
হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম ও শিন্তৌধর্মের পূর্বধর্মে এটি দেবতাদের প্রতিনিধিত্বকারী মানচিত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বা বিশেষ করে শিন্তৌধর্ম, স্বর্গ, কামি বা প্রকৃত মন্দিরের ক্ষেত্রে। মণ্ডল সাধারণত আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতিনিধিত্ব করে, বাইরে থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ কোর পর্যন্ত, স্তরগুলির মাধ্যমে।
প্রিয় প্রশ্নকারী!
নিচের লাইনটি লক্ষ করুন। তাহলে খুব সহজেই বুঝে আসবে যে, ম্যান্ডেলা আর্ট-এর মধ্যে শিরিক লুকয়িত আছে। কেননা, উইকিপিডিয়া বলছে,
এটি দেবতাদের প্রতিনিধিত্বকারী মানচিত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কাজেই ম্যান্ডেলা আর্টের সাথে যে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের আকিদা বিশ্বাস জড়িত তা সহজেই অনুমেয়। ম্যান্ডেলা আর্ট তাদের ধর্মীয় প্রতীক বা নির্দশন।
আর কোনো মুসলমানের জন্য বিধর্মীদের ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার, অঙ্কণ, চিত্রায়ণ কিংবা ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ নাই।
কেননা এই চিহ্ন এবং নির্দশনগুলোর মধ্যে যা রয়েছে তা ভ্রষ্ট বিশ্বাসকে নির্দেশ করে , যা আল্লাহ তায়ালার, একত্ববাদ, প্রভুত্ব, তার উলুহিয়্যাত এবং আল্লাহ তায়ালার সকল নাম এবং সিফাতে বিশ্বাসী একজন মুসলমানের জন্য উপযুক্ত নয়। যেমন কেউ তার পোশাকে, বিছানায় বা পর্দায় ক্রুশের চিহ্ন বহন করলো! এটা তার জন্য জায়েজ নাই। কারণ ক্রুশ খ্রিস্টানদের একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটের স্লোগান-প্রতীক। তারা বিশ্বাস করে যে যীশুখৃষ্ট (হজরত ঈসা আ.) হলেন,তাদের উপাস্য। এবং তিনি তাদের পাপ থেকে রক্ষা করার জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন।
من هذه العلامات والرموز ما يدل على عقيدة فاسدة، لا تليق بالمسلم الموحِّد لله في ربوبيته، وأُلوهيته، وأسمائه وصفاته، كمن يحمل علامة الصليب على ثيابه، أو فراشه، أو غطائه؛ لأن الصليب شعار صِنْفٍ من النصارى الذين يعتقدون أن -معبودهم هو عيسى عليه السلام، وأنه صُلِب ليُخلِّصهم من الخطايا
অথচ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ -
এবং তাদের এই উক্তির কারণে যে, আমরা আল্লাহর রাসূল ঈসা ইবনে মারয়ামকে হত্যা করেছি। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং শূলেও চড়াতে পারেনি; বরং তাদের বিভ্রম হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যারা এ সম্পর্কে মতভেদ করেছে, তারা এ বিষয়ে সংশয়ে নিপতিত (এবং) এ বিষয়ে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের প্রকৃত কোনও জ্ঞান ছিল না। সত্য কথা হচ্ছে তারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে হত্যা করেনি। (সুরা নিসা-১৫৭)
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন-
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ قُلْ فَمَنْ يَمْلِكُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ أَنْ يُهْلِكَ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا
তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা মায়েদা-72)
وقد أفتى بعض أهل العلم بمنع حمل علامة الصليب أينما كانت، سواء في المأكولات، أو المشروبات، أو الملبوسات، أو الستور والبُسُط، أو قلنسوة الرأس، أو العُملات والساعات والخواتيم بيعًا وشراءً واتِّخاذًا؛ لأن اتخاذه يدلُّ على المساندة والموافقة والموالاة.
فعن عائشة رضي الله عنها أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم كان لا يَتْرُكُ في بَيْتِهِ شَيْئًا فيه تَصْلِيبٌ إلَّا قَضَبَهُ (أي: قطعه وأزاله)"؛ صحيح سنن أبي داود.
وعن عدي بن حاتم رضي الله عنه قال: أَتَيْتُ النبيَّ صلى الله عليه وسلم وفي عُنُقِي صَلِيبٌ من ذَهَبٍ، فقال: ((يا عَدِيُّ، اطْرَحْ عَنْكَ هذا الْوَثَنَ))؛ صحيح سنن الترمذي.
وعن أمِّ عبدالرحمن بن أُذَيْنةَ قالت: كُنَّا نَطُوفُ بِالْبَيْتِ مَعَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، فَرَأَتْ على امْرأَةٍ بُرْدًا فِيهِ تَصْلِيبٌ، فقالت أم المؤمنين: "اطْرَحِيهِ، اطْرَحِيهِ؛ فإِنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم كان إذا رَأَى نَحْوَ هذا قَضَبَهُ"؛ رواه أحمد وإسناده جيد.
সম্মানিত দ্বীনি ভাই/বোন!
আপনি বলেছেন “আমি তো গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করে বা ফুল দিয়ে অংকন করি”। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, ম্যান্ডেলা আর্ট শুরুই করতে হয়, কাটা কম্পাস বা পেন্সিল কম্পাস দিয়ে। এবং এর প্রতিটি ভাঁজই বিশেষ প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমনটি আমরা দেখতে পাই উইকিপিডিয়ার প্রদত্ব তথ্যে।
প্রতিটি যন্ত্র অনন্য এবং বিস্তৃত প্রতীকী জ্যামিতিক নকশার মাধ্যমে দেবতাকে অনুশীলনকারীর উপস্থিতিতে ডাকে।
পণ্ডিতের মতে, যন্ত্রগুলি মহাজাগতিক সত্যের উদ্ঘাটনমূলক প্রতীক এবং মানুষের অভিজ্ঞতার আধ্যাত্মিক দিকটির নির্দেশমূলক ছক হিসাবে কাজ করে।
কাজেই এজাতীয় নকশা অঙ্কন করা জায়েজ নাই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন।
ম্যান্ডেলা আর্টের সূচনা, বিস্তারিত জানতে এই লিংকটি দেখতে পারেন। https://bn.wikipedia.org/wiki/
No comments