মাইকের অপব্যবহার
![]() |
photo by:canva |
(১৪ ফেব্রুআরি ২০১৭ এ লেখা)
গতকাল শুরু হয়েছে আমার নানা শশুর, কুমিল্লার পীর সাহেব নামে খ্যাত নামে খ্যাত, হযরত মাওলানা ফজলুর রহমান রহিমাহুল্লাহ- এর বাড়িতে তিন দিন ব্যাপী বার্ষিক মাহফিল। সারা দেশে তিনি কুমিল্লার পীর সাহেব নামে পরিচিত হলেও চাঁদপুরে তিনি পরিচিত ছিলেন বাগিচাপুরের পীর সাহেব নামে। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি ছিলেন চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব হযরত মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল করীম রহ এর খলিফা। রহমান রহিমাহুল্লাহ- এর বাড়িতে তিন দিন ব্যাপী বার্ষিক মাহফিল। সারা দেশে তিনি কুমিল্লার পীর সাহেব নামে পরিচিত হলেও চাঁদপুরে তিনি পরিচিত ছিলেন বাগিচাপুরের পীর সাহেব নামে। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি ছিলেন চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব হযরত মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল করীম রহ এর খলিফা।নানু শাশুড়ির পীড়াপীড়িতে শেষতক আসতেই হলো। মাগরিবের জামাতের সময় এসে পৌছলাম বাগিচাপুর। বাদ মাগরীব শুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হলো মাহফিলের মূল কার্যক্রম, চললো রাত ১১.১০ টা পর্যন্ত। মাহফিলে শ্রোতার সংখ্যা যা ই থাকুক, হরন সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। চোখে পড়া নয় বরং একেবারে কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম !! মাহফিল সঞ্চালকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম হরন সংখ্যা মাত্র (?) ২২ টি!!
দরবেশ মিয়ার কাণ্ড!
শেষ রাতে দরবেশ মিয়ার মাইকের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো। মোবাইল চেপে দেখি ০৫.০৯ মিনিট। অথচ আজকে ফজর শুরু হয় ০৫.১৮ মিনিটে। ঘড়ির কাটা ০৫.৩০. পেরিয়ে, তখনও কানের গোড়ায় মাইক বাজছে। মসজিদের পাশের গাছে ত্রিমুখি মাইক। আশেপাশের মসজিদের কথা না হয় বাদ ই দিলাম। এই মসজিদের কিছু মুসল্লিও তখন নামাজ ও তাসবীহ পাঠে রত।
:
আবার নামাজের ১০মিনিট আগে বেজে উঠলো মাইক ! নামাজের ১০ মিনিট বাকী, সেটাও মুসল্লিদের জানাতেই হবে! অথচ সালাম ফিরিয়ে দেখি বারান্দাসহ ৬ কাতারের মসজিদের সাড়ে তিন কাতারই ফাঁকা! তবুও পেন্ডেলে জামাত করতে হবে !!
বাদফজর জিকিরের বয়ান; যেনো মিনি পল্টন ময়দান। মাইকে জিকির করার কী অর্থ হতে পারে জানা নাই। আবার দুপুর ০২ টা থেকে শুরু হয়েছে শিশুদের হামদ না'ত, কুরআন
তেলাওয়াত। আচ্ছা একটা কথা; মাহফিলগুলোতে আসরের আগে পরে বা অন্য যে কোন সমময় যেই তেলাওয়াত হয় সেগুলো চুপ থেকে মনযোগ সহকারে শ্রবণ করা কি জরুরী নয় ? নাকি এধরনের তেলাওয়াত """ওয়াইজা কুরিয়াল কুরআনু ফাছতামিঊলাহু ওয়া আনছিতু""" (যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন চুপ থেকে গভীর মনযোগের সাথে শ্রবণ করো)। এই হুকুমের আওতার বাইরে? নাকি জোর করে হলেও মানুষকে কুরআন তেলাওয়াত শোনাতে হবে?
.
হযরত মাওঃ ওমর পালনপুরী রহঃ বলতেন, ""আল্লাহ তায়ালা যখন বলেছেন গভীর মনযোগ সহকারে কোরআন শ্রবণকারী রহমতপ্রাপ্ত হবে ঠিক তার বিপরীত যদি কেউ তেলাওয়াত চলাকালী গভীরভাবে কোরআন শ্রবণ না করে বরং কথা বলে কিংবা অমনোযোগী থাকে তাহলে সে নিশ্চয় রহমতের বিপরিত আল্লাহ তায়ালার গজবের (আজাবের) শিকার হবে।"----নাউজুবিল্লাহ।
.
ভেবেছিলাম আজ ঢাকায় চলে যাবো, কিন্তু দেখলাম বক্তাদের লিষ্টে মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ সাহেবের নাম। অপরদিকে মামাদের জোর নির্দেশ 'আজকে কিছুতেই যাওয়া যাবে না। তাই ইচ্ছা
পরিবর্তন করলাম। তাছাড়া মাদরাসাও যেহেতু বন্ধ কাজেই তেমন একটা তাড়া নেই।
.
বাদ যোহর শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম। সেই একই উপাখ্যানের নতুন চিত্রায়ন। হামদ নাত গজল, তেলাওয়াত। আর "শত আলিফ টানা ৮/১০ মিনিট ব্যাপী আজান তো আছেই। চললো প্রায় রাত ১১.৪৫ টা পর্যন্ত।
অবশ্য ইশার নামাযের পর কিছু সময়ের জন্য আমাকেও বসতে হয়েছে মাইকের সংশ্রবে!! কিন্তু যে উদ্দেশ্যে রয়ে গেলাম শেষ পর্যন্ত তা আর সফল হলো না। দারুলউলুম দেওবন্দের মুহতামিম সাহেবের ঢাকা সফরের কারণে মুফতি মিজানুর রহমান সাহেব আসতে পারেননি।.
রাত পৌনে বারোটায় মাহফিল শেষে মাইক অপারেটর আবার শুরু করলো তার এ্যাডভারটাইস।:
কিন্তু এভাবে আর কত চলতে থাকবে মাইকের অপব্যবহার? আর কতোকাল চলবে এই ধারা? বাইরের হরণ ছাড়া কি মাহফিল হয়না? আচ্ছ, বুঝলাম কিছু কিছু মা-বোনের মাহফিল শোনার আগ্রহের কারণ বাইরে মাইক দিতে হয়। কিন্তু সেই আগ্রহীদের সংখ্যা কত ? এই সল্পসংখ্যক মানুষকে মাহফিল শোনানোর অজুহাতে এই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কষ্ট দেয়া কি শরীয়ত সমর্থিত?
২.মসজিদের আশপাশের নারীরা জুমার বয়ান শোনতে চায়, তাই বয়ানের সময় মিনারার মাইক ব্যবহার করতে হয়! কিন্তু খুতবা, কেরাআত, দোয়া মুনাজাতও কি তারা শোনতে আগ্রহী !! আমার কি জানা নেই ঢাকা শহরকে বলা হয় মসজিদের শহর ! (আলহামদুলিল্লাহ)
৩.ঢাকার মসজিদগুলো পরস্পর দূরত্ব কতটুকু ? আমার দরাজকন্ঠের "মুরালী সুর" আর কানফাটা শব্দের কারণে পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম সাহেব যে কেরাআত ভুলে যান আমি কি সেটা ভেবে দেখেছি?
৪.সাপ্তাহিক তাফসির মাহফিলেও একই অজুহাতে আমাকে মাইক ব্যবহার করতে হয় !! কিন্তু আমার মসজিদের পাশে যে দু'চারটি হসপিটাল, এক'দুটি আবাসিক মাদরাসা আছে আমি কি সেটা ভুলে গেছি? শুধু শহরে নয়, আলহামদুলিল্লাহ প্রতিটি গ্রামেও ৫/৭টা মসজিদ। কোথাও কোথাও তো প্রত্যেক বাড়ীতে বাড়ীতে মসজিদ!! :
এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বললে, অনেক বলা যাবে। কিন্ত বলা যত কম হয় ফল যদি বেশি হয়
সেটাই ভালো। কেউ হয়তো ভুল করতে পারেন যে এখানে ওয়াজ মাহফিলকে সমালোচিত করা হয়েছে! কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। এদেশের জনসাধারণের মাঝে যেটুকু ধর্মীয় বোধ ও চেতনা অবশিষ্ট আছে তার সিংহভাগই প্রচলিত ধারার ওয়াজ মাহফিলের ফসল। কাজেই এখানে মাহফিল নয় বরং পরিচালকগণের সতর্কদৃষ্টি কাম্য।
No comments