Header Ads

মুজদালিফার পরিচয় এবং সেখানকার আমল

মুজদালিফার নামকরণের কারণ:

(ক) مُؤْدَلِفَةٌ শব্দটি اِزْدِلاف  থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ , জমা হওয়া, সমবেত হওয়া। যেহেতু হাজীগণ এখানে জমা হন তাই এর নাম মুজদালিফার (তাবয়ীনুল হাকায়েক্ব-২/৩০১)। মুজদালিফার অপর নাম মাশআরুল হারাম। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬২)


মুজদালিফার অবস্থান:

মুজদালিফার হল মিনা ও আরাফার মাঝখানে একটি প্রশস্ত উপত্যকা। মুজদালিফার উত্তর প্রান্তে মসজিদে মাশআরুল হারাম। মসজিদে নামিরাহ থেকে এর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। মিনার মসজিদে খাইফ থেকে এর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। মসজিদে হারাম থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। (আল বাহরুল আমীক্ব, হাশিয়া-৩/১৬০০; ও ৩/১৪১৬)


মুজদালিফার বিবিধ মাসায়েল:

১। পাঁয়ে হেঁটে মুজদালিফায় যাওয়া মুস্তাহাব। আজকাল ভীড়ের কারণে আরাফাহ থেকে মুজদালিফায় গাড়ীতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। পায়ে হেঁটে সময় কম লাগে। সাথে নারী, শিশু, দুর্বল বা অসুস্থ হাজী থাকলে পায়ে হেঁটে যাওয়া উচিৎ হবে না। বর্ণনাতীত ভোগান্তির সম্ভাবনা থাকে। (আদ্দুররুল মুখতার-৩/৫২৪)


২। মুজদালিফায় যাওয়ার পথে কোথাও অবস্থান করবে না। সরাসরি মুজদালিফায় গিয়ে অবস্থান করবে। ক্লান্ত হলে ক্ষণিকের জন্য পথে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬২; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৩)


৩। নয়ই জিলহজ্জ সূর্যাস্তের পর আরাফাহ থেকে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হবে। -গুনিয়াতুন নাসিক: ১৬১,   মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৩)


৪। আরাফাহ থেকে মুজদালিফা পর্যন্ত পথে তালবিয়া, তাকবীর, তাসবীহ-তাহলীল, ইস্তেগফার, দুয়া, দুরুদ খুব বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬২: মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৩)


৫। মুজদালিফার মধ্যে চলাচলের রাস্তায় অবস্থান করা মাকরুহ। রাস্তা বন্ধ করে বসার কারণে লক্ষ লক্ষ লোকের ভীড় হয়। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬২; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৪; আল বাহরুল আমীকু-৩/১৬০২)


৬.মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায়ের নিয়ম:

মুজদালিফায় পৌঁছার পর প্রথম কাজ হলো ইশার ওয়াক্তে মাগরিব ও ইশা একসঙ্গে আদায় করা। হানাফি মাজহাব মতে জামাতের সাথে পড়লে উভয় নামাজ এক আযান ও এক একামতে আদায় করবে। মাঝখানে সুন্নাত ও নফল পড়বে না। (তাবরানী আল মুজামুল কাবীর-৪/১৩০, গুনিয়াতুন নাসিক-১৬২, মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৪)


৭। মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করা ওয়াজিব। তবে এর জন্য ৬টি শর্ত আছে- (ক) হজের ইহরাম অবস্থায় থাকা। (খ) মুজদালিফার পূর্বে আরাফায় অবস্থায় করা। (গ) সময়টি ১০ জিলহজের রাত হওয়া। (ঘ) স্থানটি মুজদালিফার সীমানায় হওয়া। (ঙ) ইশার ওয়াক্ত হওয়া। (চ) প্রথম মাগরিব তারপর ইশা আদায় করা। কোন শর্ত না পাওয়া গেলে মাগরিবের সময় মাগরিব ও ইশার সময় ইশা আদায় করতে হবে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৩; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৫: আদ্দুররুল মুখতার-৩/৫২৬)

৮। মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা এক সাথে আদায়ের ক্ষেত্রে জামাত ও হজের ইমাম থাকার কোন শর্ত নেই। ইশা পড়লেও দুই নামাজ একসাথে পড়তে হবে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৫; ফাতওয়া হিন্দিয়া-১/২৩০)


৯। কেউ মুজদালিফায় পৌঁছার আগে অথবা মুজদালিফা অতিক্রম করে মিনায় মাগরিব ও ইশা আদায় করলে বা দুটির কোন একটি আদায় করলে ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর নিকট নামাজ হবে না বরং সুবহে সাদিকের আগে মুজদালিফায় গিয়ে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। যদি সুবহে সাদিকের আগে মুযদালিফায় পৌঁছতে না পারে কিংবা পৌঁছল কিন্তু নামাজ আদায় করতে পারল না। তাহলে ঐ নামাজই তার জন্য যথেষ্ট হবে। গুনাহগার হওয়া সত্ত্বেও কাজা আদায় করতে হবে না। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৩; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৫)



১০। রাস্তায় ভীড়ের কারণে অথবা রাস্তা না চেনার কারণে বা অন্য কোন কারণে রাস্তার মধ্যে সুবহে সাদিক হওয়ার আশংকা হলে মাগরিব ও ইশা রাস্তায় আদায় করে নিবে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৪; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৬)


১১। দশ জিলহজের রাতটি মুজদালিফায় কাটানো হানাফি মাজহাব মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।  (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৫; ফাতওয়া তাতারখানিয়াহ-৩/৫২০)


১২। মুজদালিফার রাতটি ঈদুল আজহার রাত। এ রাতে ইবাদত বন্দেগী করার অনেক ফজিলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই এই রাতে নামাজ, তিলাওয়াত, জিকির, তালবিয়া, দুয়া এবং কান্না কাটির মধ্যে কাটানো উচিৎ। গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৫; ফাতওয়া তাতারখানিয়াহ-৩/৫১৯)


১৩। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে অন্ধকারে আদায় করা উত্তম। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬১। মানাসিকে মোল্লা আলী-২২০) ১৮। দশই জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যেবর্তী সময় কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। অন্তত মুজদালিফার উপর দিয়ে অতিক্রম করলেও ওয়াজিব আদায় হবে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৬; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৯; কানযুদ দাক্বায়েকু-২/৫৯৯)


১৪। মুজদালিফায় আউওয়াল ওয়াক্তে ফজর আদায় করে জিকির, দুয়া, তাসবিহাত ইত্যাদিতে মশগুল থাকা ও সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নাত। (সহীহ মুসলিম-১/২৯৮; গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৬)


১৫। মুজদালিফায় নির্দিষ্ট সময় অজ্ঞান কিংবা ঘুমন্ত থাকলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৬; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৯)


১৬। শরঈ ওজর ছাড়া মুজদালিফার অবস্থান ছেড়ে দিলে একটি দম ওয়াজিব হবে। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৬; মানাসিকে মোল্লা আলী-২১৯) 



১৭। শরঈ ওজরের কারণে মুজদালিফায় অবস্থান করতে না পারলে কোন জরিমানা ওয়াজিব হবে না। যেমন- অত্যধিক দুর্বলতা, মারাত্মক অসুস্থতা এবং অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে নারীদের মুজদালিফায় অবস্থান না করে মিনায় চলে যাওয়া। (শরহু মায়ানীর আছার- ২/২৯১: মুসনাদু আহমাদ-১/৩৪৪; গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৬)


১৮। নারীদের সাথে সুস্থ সবল পুরুষরাও যদি মুজদালিফায় অবস্থান ছেড়ে দেয় তাহলে তাদের  ওপর দম ওয়াজিব হবে। কাজেই তাদের জন্য আবশ্যক হলো, নারী, শিশু, অসুস্থ ও দুর্বলদের মিনার তাঁবুতে পৌঁছে দিয়ে উকুফের সময়ের মধ্যে মুজদালিফায় চলে আসা। (গুনিয়াতুন নাসিক-১৬৬; আহসানুল ফাতওয়া-৪/৫৩০)


No comments

Powered by Blogger.