Header Ads

আবাসিক মহিলা মাদরাসা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

শিক্ষা মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। চোখ ছাড়া যেমন মানুষ চলতে পারে না তেমনি শিক্ষা ছাড়াও মানুষ চলতে পারে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ সবচেযে বেশী যেই  জিনিসের মুখাপেক্ষী হয় তাহলো শিক্ষা। কোনো জাতিসত্বার মূল চালিকা শক্তি হলো শিক্ষা। প্রতিটি মানব সত্ত্বা স্বতন্ত্র  একটি জাতী সত্ত্বা। তাই জাতির অগ্রগতিতে যেমন শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি ব্যক্তি গঠনেও শিক্ষার বিকল্প নেই। 

শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্ব বুঝাতেই যেন আল্লাহ তায়ালা اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ  (পড় তোমার রবের নামে, যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন)  বলে হেরা গুহায় প্রথম ওহী নাজিল করেছেন! 

আল্লাহ তায়ালার কুদরতে মানুষ যেভাবে পৃথীবির আলোর মুখ দেখেছে তেমনিভাবে আল্লাহর কাছ থেকেই সে ইলমের নূর লাভ করেছে। ইলমে ইলাহীর মাধ্যমে মানুষ নবজীবন লাভ করে। ইলমের ছোঁয়ায় দৈহিক মানুষ প্রকৃত মানুষে আবির্ভূত হয়।

শিক্ষার অপরিহার্যতা বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-

طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ

ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেমুসলিমের জন্য ফরজ।

বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মৌলিকভাবে শিক্ষা দুই প্রকার: বস্তু শিক্ষা ও দ্বিনি শিক্ষা। মানুষের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের উপযোগী জ্ঞান ও বিদ্যা হচ্ছে জাগতিক শিক্ষা। যেমন বিজ্ঞান, চিকিৎসা, ভূগোল, পর্দার্থ, গণিত ইত্যাদি। এই শিক্ষার মূল সূত্র অভিজ্ঞতা। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, আখেরাতের সফলতা এবং ব্যর্থতার জ্ঞান হচ্ছে দ্বিনি শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল সূত্র হলো, আল্লাহ তায়ালার ওহী। 

বস্তু শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে সাজিয়েছেন দারুল আসবাব তথা “বস্তু জগত” হিসেবে। মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনের জন্য দান করেছেন পঞ্চইন্দ্রিয় ও জ্ঞান-বুদ্ধি। এই মাধ্যমগুলো কাজে লাগানোর প্রতি ইসলাম পূর্ণমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে বরং ক্ষেত্রবিশেষ উদ্বুদ্ধও করেছে। এবং নিয়ত ও পদ্ধতির বিশুদ্ধতার কারণে সেগুলো পুণ্যের কাজ বলেও উল্লেখ করেছে। 


দ্বিনি  শিক্ষার প্রয়োজনীয়ত

দ্বিনি  শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কাউকে কাগজ কলম নিয়ে বুঝাতে হয় না। কেননা ধীসম্পন্ন মানুষ যেভাবে জাগতিক সৃংঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বস্তু শিক্ষার প্রয়োজনীয়ত অনুভব করেন তেমনি দ্বিনের হেফাজত  এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। 

মুসলিম সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ যেন আল্লাহর হুকুম মেনে, রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহ মোতাবেক, হারাম থেকে বেঁচে হালালভাবে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য কুরআন-সুন্নাহয় পারদর্শী একটি জামাআত বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা এই নির্দেশ নিয়ে ইরশাদ করেন, 

وَمَا کَانَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لِیَنۡفِرُوۡا کَآفَّة ٌ  ؕ   فَلَوۡلَا نَفَرَ مِنۡ کُلِّ فِرۡقَةٍ مِّنۡہُمۡ طَآئِفَةٌ لِّیَتَفَقَّهُوۡا فِی الدِّیۡنِ وَلِیُنۡذِرُوۡا قَوۡمَهُمۡ اِذَا رَجَعُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ یَحۡذَرُوۡنَ

 মুসলিমদের জন্য এটাও সঙ্গত নয় যে, তারা (সর্বদা)  একত্রে সবাই (জিহাদে) বের হয়ে যাবে। সুতরাং তাদের প্রতিটি বড় দল থেকে একটি ক্ষুদ্রদল কেন (জিহাদে) বের হয় না, যাতে (যারা জিহাদে যায়নি) তারা দীনের ‘উপলব্ধি’ আহরণ করতে পারে এবং জিহাদে গমণকারীগণ ফিরে আসার পর তাদের সতর্ক করতে পারে ফলে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকবে!

একারণে প্রত্যেক অঞ্চলে ইলমে দ্বিনে পারদর্শী ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান থাকা ফরজে কেফায়া। আর এই উদ্দেশ্যে ইলমে দ্বিনের চর্চা  অব্যাহত রাখা সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য। 

নারী এই সমাজেরই অংশ। কুরআন সুন্নাহের বিধানে (কিছুটা ব্যতিক্রম ছাড়া) যেখানেই পুরুষকে সম্ভোধন করা হয়েছে সেখানে প্রত্যক্ষ বা প্ররোক্ষভাবে নারীকেও সম্ভোধন করা হয়েছে। পুরুষের ন্যায় নারীর জন্য দ্বিনে অন্তত এতটুকু ইলম শিক্ষা করা জরুরী যার দ্বারা সে তার ব্যক্তিগত  এবং পারিবারিক জীবন পরিচালনা করতে পারবে। তার সন্তানের  দ্বিনের মৌলিক শিক্ষা এবং ইসলামী তাহজীব তামাদ্দুন শিক্ষা দিতে পারবে। যদিও ওপরোক্ত শিক্ষাগুলো নারীর জন্য ঘরে বসে পিতা, ভাই, মামা, চাচা, দাদা,নানা, স্বামী কিংবা সন্তানের কাছ থেকেই শেখার কথা ছিল। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনের বাস্তবতায় নারীদের জন্য ঘরে বসে সেই শিক্ষাগুলো হাসিল করা কিছুতেই সম্ভব নয়। এমনকি নারীদের দ্বিনি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এমন অসংখ্য আলেমও নিজের মাহরাম নারীদের ঘরে বসিয়ে তালিম দিতে পারেন না। ফলে বাধ্য হয়েই ওলামায়ে কেরাম নারীদের জন্য স্বতন্ত্র মাদরাসা/জামিয়া প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেছেন। 




নারীদের আবাসিক প্রতিষ্ঠান

প্রসঙ্গতই প্রশ্ন উঠে যে, শরীয়তে তো নারীদের জন্য মাহরাম ছাড়া সফরসম দূরত্বে যাতায়াত করা জায়েজ নাই। তাহলে কোনো নারীর জন্য  কি মাহরাম ছাড়া মাদরাসায় অবস্থান করা জায়েজ আছে? 

এর উত্তর হচ্ছে, হাদিস শরীফে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন-

 لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ

কোন নারী যেন মাহরাম পুরুষ ছাড়া তিন দিনের দূরত্বে সফর না করে। 

সহীহ মুসলিম: হাদীস নং-৩১৪২ 

কিন্তু সফর শেষ করার পর যদি কোনো নারী এমন কোনো স্থানে অন্তত ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করে যেখানে তার ইজ্জত আব্রু হেফাজতে থাকবে তাহলে তার অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে মাহরাম থাকা শর্ত নয়।  ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৯

" ولا يزال على حكم السفر حتى ينوي الإقامة في بلدة أو قرية خمسة عشر يوما أو أكثر، كذا في الهداية"( الفتاوى الهندية،كتاب الصلوة،الباب الخامس العشر في صلاة المسافر،ج:1،ص:199)

দারুল উলুম দেওবন্দের দৃষ্টিভঙ্গি

দারুল উলুম দেওবন্দ মাহিলা মাদরাসার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত  আরোপ করেছে। সেগুলো বহাল রেখে যদি মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং নারীদের নিরাপদ অবস্থানের ব্যভস্থা করা হয় তাহলে সেখানে নারীদের ইজ্জত-ইফফত লঙ্ঘিত হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকবে না। আর ফিতনার আশঙ্কায় নারীদের দ্বিন শেখা থেকে বিরত রাখারও প্রয়োজন হবে না।  


সেই শর্তগুলো হলো-

এক.

خواتین کی تعلیم گاہیں اور اسکول وکالج صرف اور صرف خواتین کے لیے مخصوص ہوں،مخلوط تعلیم نہ ہو اور مردوں کا ان تعلیم گاہوں میں آنا جانا اورعمل دخل ہرگز نہ ہو، مدرسہ کا جائے وقوع فتنہ فساد اور اس کے امکان سے بھی محفوظ ہو۔ 

মেয়েদের মাদরাসা, স্কুল-কলেজ শুধুমাত্র নারীদের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে। সেখানে কোনো ধরণের সহশিক্ষা থাকতে পারবে না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পুরুষদের  যাতায়াত এবং তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকতে পারবে না। মাদরাসার অভ্যন্তর সম্পূর্ণ ফিতনা ফাসাদ মুক্ত থাকতে হবে। 


দুই.

ان تعلیم گاہوں تک خواتین کی آمد ورفت کا شرعی پردہ کے ساتھ ایسا محفوظ انتظام ہو کہ کسی مرحلہ میں بھی فتنہ کا اندیشہ نہ ہو۔

    

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শরীয়া পর্দার সাথে নারীদের প্রবেশাধিকারের জন্য এমন নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে কোনো পর্যায়ে ফিতনার আশঙ্কা না থাকে।


তিন.

نیک کردار، پاک دامن عورتوں کو تعلیم کے لیے مقرر کیا جائے، اگر ایسی معلمات نہ مل سکیں تو بدرجہٴ مجبوری نیک صالح اور قابل اعتماد مردوں کو مقرر کیا جائے جو پس پردہ خواتین کو تعلیم دیں۔

    

পাঠদানের জন্য আখলাকী, উত্তম চরিত্রা সতীসাধ্বী নারীদের নিয়োগ দিতে হবে। যদি এমন শিক্ষকা পাওয়া না যায়, তাহলে বাধ্য হয়েই ধার্মিক ও বিশ্বস্ত পুরুষ  শিক্ষিক নিয়োগ করতে হবে যারা পর্দাল অড়াল থেকে নারীদের পাঠদান করবে। 


চার. 

مدرسہ کے حالات کی کڑی نگرانی اور مفاسد وفتن کی روک تھام کا اہتمام بہت ہی اعلیٰ درجہ کا ہو۔  


মাদ্রাসার সার্বিক ব্যবস্থাপনার উপর কঠোর নজরদারি থাকতে হবে এবং ফিতনা ফাসাদ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত উচ্চমানের হতে হবে।


পাঁচ.

اگر کوئی مدرسہ شرعی مسافت پر ہو تو وہاں جانے کے لیے عورت کے ساتھ اس کا محرم بھی ہو۔


    যদি কোনো মাদরাসা শরঈ সফরসম দূরত্বে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ছাত্রী শিক্ষিকাদের যাতায়াতে তাদের সঙ্গে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।


ছয়. 

مدرسہ والوں کے عقائد اہل سنت والجماعت کے عقائد کے موافق ہوں تاکہ ان مدارس میں تعلیم حاصل کرنے سے عقائد خراب نہ ہوں۔ مذکورہ بالا شرائط کے ساتھ اگر کسی جگہ تعلیم دی جاتی ہو تو وہاں لڑکیوں کو تعلیم دلانا جائز اورمباح ہوگا۔ واضح رہے کہ لڑکیوں کو تعلیم دلانے میں والدین کی ذمہ داری ہے کہ وہ یہ کوشش کریں کہ کم سے کم عمر میں ہماری لڑکی زیادہ سے زیادہ تعلیم حاصل کرلے؛ کیوں کہ بڑی لڑکیوں کو دور دراز بھیجنے میں مفاسد ہیں اس لیے بالکل شروع ہی سے ان کی تعلیم کی طرف توجہ دی جائے۔


    মাদরাসা কর্তৃপক্ষের আকীদা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে যাতে এসব মাদ্রাসায় অধ্যয়নের মাধ্যমে আকীদা নষ্ট না হয়। উপরোল্লিখিত শর্তাবলীসহ যদি কোন স্থানে শিক্ষা প্রদান করা হলে সেখানে নারীদের শিক্ষা প্রদান করা জায়েয ও মুবাহ হবে। উল্লেখ্য যে, মেয়েদের ন্যূনতম বয়সে সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভের চেষ্টা করার জন্য পিতামাতার দায়িত্ব; যেহেতু বয়স্ক মেয়েদের দূরবর্তী স্থানে পাঠানোর অসুবিধা আছে, তাই প্রথম থেকেই তাদের পড়ালেখার দিকে নজর দিতে হবে।


অতএব ওপরোক্ত শর্তাবলী, শরীয়তের তাকাযা এবং মূলনীতির আলোকে বিবেচনা করে আবাসিক মহিলা মাদরাসাকে না জায়েজ বলার কোনো সুযোগ নেই। 


মহিলা মাদরাসার প্রচলিত পদ্ধতি অবশ্যই জরুরতের পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। যাদের ক্ষেত্রে এই জরুরত নাই তাদের জন্য নিজের বাসস্থান ছেড়ে দূরে মাদরাসায় পড়াও জায়েজ হবে না। 


উল্লেখ্য, জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থায়ও যদি নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারে তাহলে শর্তসাপেক্ষে তাদের জন্যও আবাসিক ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহনের অবকাশ থাকবে। তবে বাস্তবতা হলো, একমাত্র মাদরাসা ছাড়া কোথাও নারীদের নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা নেই।  -




1 comment:

Powered by Blogger.