Header Ads

রাগান্বিত অবস্থায় তিন তালাক !

 জনাব,

    আমার নাম: কাতেব আলী, পিতার নাম: ইনু সর্দার , মাতার নাম: ফুলেল বিবি, বয়স-পিতা -৬১ মাতা-৫৫, ঠিকানা: ......... (নামগুলো ছদ্ম)

          আমার একটা মাসআলা জানার প্রয়োজন ছিল। মাসআলা হলো-

আমার বাবার প্রচুর পরিমাণে রাগ। প্রতিনিয়ত মা-বাবার মধ্যে সামান্য কারণে ঝগড়া লাগে। ঝগড়া লাগলে আমার বাবা প্রচুর পরিমাণে কটু কথা মুখ থেকে উচ্চারণ করে যা প্রকাশ করার মতো না আমার বাবার রাগ এতটাই তীব্র হয়ে যায় যে ঐ সময়ে সে সকল হিতাহিত ঞান ভুলে যায় এবং ঐ সময় উনি যাকে সামনে পায় তাকে আঘাত করে কেবলমাত্র মতের বিরুদ্ধে গেলে পাশাপাশি যখন উনি মাকে আঘাত করে তখন যদি একটি ছোট বাচ্ছাও যায় তাকেও সে আঘাত করে  পাশাপাশি আমার মা এক পর্যায়ে সহ্য করতে না পারলে তার মুখ থেকে কিছু কটু কথা বলে যা প্রকাশ করার মত  না। আমার বাবা কারো মতামত কে কখনও প্রাধান্য দেইনা উনি সবসময় নিজেকে বড় মনে করে। আরও একটি ঘটনা  উল্লেখ করতে চাচ্ছি তা হচ্ছে আমার বাবার রাগ এতটাই তীব্র যে সে সামনে যা পায় তা দিয়ে উনি আঘাত করা শুরু করে, যেমন এরকম এক ঝগড়ার দিনে আমার মাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত আরও ইত্যাদি অনেক কিছু দিয়েই আঘাত করে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হয়তো তা করতো না। 

যাই হোক,  প্রায় দিনের ন্যায়  ৯/১২/২৪ তারিখে সামান্য ডিম সিদ্ধ নিয়ে ঝগড়া লাগলে ঝগড়ার একপর্যায়ে দুজনের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার বাবা হাতে লাঠি নেয় মাকে আঘাত করার জন্য। এমতাবস্থায় আমার মা দরজা লাগিয়ে দিলে বাবা এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বায়েন তালাক দিয়ে বলে তোর মন যা চায় তুই তাই কর! আমার বড় ভাই ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করে। উনি এই ঘটনার পরে বেশ কিছু আলেম উলামার সাথে কথা বলার পাশাপাশি উনি একজন মানষিক ডাক্তারের সাথে এই বিষয় গুলি শেয়ার করেন। ডাক্তার বিস্তারিত শোনার পরে জানায় যে আমার বাবার মানসিক রোগ আছে। পাশাপাশি উনি চিকিৎসা নেয়ার ও পরামর্শ জানায়। এমতাবস্থায় আমাদের  শরীআহ অনুযায়ী কি করণীয় হবে তা জানালে আমরা আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। 

প্রশ্নকারী: 

মুহাম্মাদ কাতেব আলী 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বিবাহ বন্ধন মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তা ছিন্ন করা উচিত নয়। বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার একান্ত  প্রয়োজন দেখা দিলে সেক্ষেত্রে ইসলামের মৌলিক নীতিমালা অনুসরন করেই বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা আবশ্যক। একসাথে তিন তালাক দেওয়া ও রাগের মাথায় তালাক দেওয়া আল্লাহর নেয়ামতের না শোকরী করার নামান্তর। যদিও এভাবে তালাক দিলে তালাক হয়ে যায়। 

স্ত্রী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। আর আল্লাহর বিধান হলো, যদি কেউ তার নেয়ামতের অবজ্ঞা করে তাহলে তিনি তার থেকে নেয়ামত ছিনিয়ে নেন। যে নিষ্ঠুর স্বামী সামান্য ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে নিজ স্ত্রীকে তিন তালাক দেয় আল্লাহ পাক এরূপ নিষ্ঠুর ও অকৃতজ্ঞ স্বামীর শাস্তিস্বরূপ তার জন্য ঐ স্ত্রীকে হারাম করে দিয়ে তার থেকে স্ত্রীর মত এই বৈধ ও মূল্যবান নিয়ামত ছিনিয়ে নেন।

প্রশ্নোল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী আপনার মায়ের উপর উপর তিন তালাক পতিত হয়েছে। আপনার মা আপনার বাবার জন্য স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে গেছেন। এই মূহুর্তে আপনার বাবা মায়ের জন্য আবশ্যকীয় করণীয় হল, উভয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া। পরস্পরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা-বার্তা বন্ধ করে দেওয়া। পৃথিবীর ইতিহাসে সন্তুষ্টচিত্তে তালাক দেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। তালাক সাধারণত রাগান্বিত অবস্থায়ই দেওয়া হয় । আর এখানে আপনি আপনার বাবার রাগের যে বর্ণনা দিয়েছেন জাগতিক বিচারে সেটাকে অসুস্থতা হিসেবে গণ্য করলেও শরীয়তে দৃষ্টিতে এতটুকু রাগের কারণে কোনো বিধানের মধ্যে পরিবর্তন আসবে না। 

এখন আপনার মায়ের জন্য করণীয় হলো, ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি আপনার বাবার ঘরেই থাকবেন এবং তাঁর ভরণপোষণ আপনার বাবা-ই প্রদান করবেন। মোহর অপরিশোধিত থাকলে মোহর পরিশোধ করে দিবেন। 

উল্লেখ্য, স্বামীর জন্য এরূপ তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে শরয়ী হালালা ব্যতীত দ্বিতীয়বার গ্রহণ করার কোন পথ নেই। শরয়ী হালালার সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, তালাকপ্রাপ্তা নারী প্রথমে তার ইদ্দত পূর্ণ করবে, ঋতুবতী মহিলার ক্ষেত্রে ইদ্দত হল তিন ঋতু পরিমাণ সময়। গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে ইদ্দত হল, তার গর্ভস্থ সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত সময়। আর যারা ঋতুবতী নয় এবং গর্ভবতীও নয় তাদের ক্ষেত্রে ইদ্দত হলো, তিন মাস।  উপরোক্ত নিয়মে ইদ্দত পালন করার পর কোন প্রকার শর্ত ছাড়াই নারী অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। তারপর উভয়ের মধ্যে দৈহিক মিলন হওয়ার পর দ্বিতীয় স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিলে অথবা তিনি (দ্বিতীয় স্বামী) মৃত্যুবরণ করলে পূর্বের ন্যায় ইদ্দত পালনের পর উভয়ে রাজী থাকলে, বিবাহের সকল শর্ত সাপেক্ষে উক্ত স্ত্রীকে প্রথম স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। উল্লিখিত সুরত ছাড়া তাদের ঘর-সংসার করার আর কোন পথ নেই। 

পরামর্শ,

সম্মানিত প্রশ্নকারী!

যেহেতু আপনার বাবা মা উভয়ে বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনিত হয়েছেন এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা গায়রে মাহরামে পরিণত হয়েছেন, তাই এখন আপনাদের জন্য উচিত হবে বাবা মা এবং নিজেদের ও পরিবারের সকলের ইমান আমল রক্ষার্থে এবং পরবর্তী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে তাদের উভয়কে আলাদা করে দেওয়া। কেননা তারা উভয়ে একসাথে থাকার ফলে যেই পাপাচারের সম্মুখীন হবেন তার ‘বদআছর’ নূন্যতম হলেও আপনাদের এবং আপনাদের সন্তানদের উপর প্রভাব বিস্তার করবে। 

কাজেই আপনারা ভাই বোনেরা পরামর্শ করে, মিলে মিশে বাবা মায়ের দায়িত্ব নিয়ে নিজ নিজ বাসায় তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করুন। এক ভাই/বোন মায়ের জিম্মাদারী নিয়ে তাকে তার বাসায় রাখুন। আপরজন বাবার জিম্মাদারী নিয়ে তাকে তার বাসায় রাখুন। তারপর নিজেরা নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নিন। তাদের সময় দিন। ফলে একদিকে আপনাদের জন্য প্রবীন বাবা মাকে হারানোর ব্যাথা থাকবে না। অপরদিকে আপনাদের সাপোর্ট পেয়ে তারাও নিঃসঙ্গতা অনুভব করবে না। এবং পরিবার এবং  সন্তানদের তত্ত্বাবধানে থেকে তারা কিছুটা হলেও মানসিক স্বস্থিতে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন। 

الأدلة الشرعية

في ’’القران الكريم‘‘ – سورة البقرة-الأية -299: الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ، فيه أيضًا : رقم الآية : ٢٢٠ قال الله تعالى : فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره-

  وفي "صحيح البخاري" -رقم الحديث-526 : عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَجُلًا طَلَّقَ امْرَأَتَهُ ثَلاَثًا، فَتَزَوَّجَتْ فَطَلَّقَ، فَسُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَحِلُّ لِلْأَوَّلِ؟ قَالَ: «لاَ، حَتَّى يَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا كَمَا ذَاقَ الأَوَّلُ»

وفي"فتح الباري"كتاب الطلاق، باب الطلاق في الاغلاق والكره، ج:9، ص: 445 (دار الحديث القاهرة) :  ولو جاز عدم وقوع طلاق الغضبان لكان لكل أحد أن يقول فيما جناه كنت غضبانا۔

وفي "بذل المجهود لحل شرح سنن أبي داؤد" كتاب الطلاق، باب في طلاق على غلط، ج:10، ص:283 ورده ابن سيد فقال: لوكان كذلك لم يقع على أحد طلاق؛ لأن أحد لايطلق حتى يغضب۔

وفي"رد المحتار على الدر المختار، كتاب الطلاق، مطلب في طلاق المدهوش،   ٤٣٩/٤  (مكتبة رشيديةباكستان):قلت:وللحافظ ابن القيم الحنبلي رسالة في طلاق الغضبان قال فيها إنه على ثلاثة أقسام أحدها أن يحصل له مبادي الغضب بحيث لا يتغير عقله ويعلم ما يقول ويقصده وهذا لا إشكال فيه، الثاني أن يبلغ النهاية فلا يعلم ما يقول ولا يريده فهذا لا ريب أنه لا ينفذ شيء من أقواله، الثالث من توسط بين المرتبتين بحيث لم يصر كالمجنون فهذا محل النظر والأدلة تدل على عدم نفوذ أقواله،ملخصا من شرح الغاية الحنبلية، لكن أشار في الغاية إلى مخالفته في الثالث حيث قال ويقع طلاق من غضب خلافا لابن القيم، وهذا الموافق عندنا لما مر في المدهوش۔ وفيها ايضا صــ৫০৯: كرر لفظ الطلاق وقع الكل . 

        و"في الفتاوى الهندية" ٤٢٣/١ (ذکریا بکڈپودیوبند) متى كرر لفظ الطلاق بحرف الواو أو بغير حرف الواو يتعد الطلاق ..... الخ .

        وفي حاشية الطحطاوى على الدرالمختار ١٠٣/٢ ( مكتبة رشيدية ) : (قوله صريح ) هو ما لا يحتاج إلى نية فى الإيقاع أما قصدها بالخطاب فلا بد منه وسواء كان الواقع به رجعيا أو بائنا كالطلاق الثلاث. و (قوله:  ملحق به) أى بالصريح فى عدم احتياجه إلى النية كأنت حرام .

        وفي فتاوی محمودیه. 13/ 32-33 (اشرفی بکڑ پودیو بند) : اور بحالت غصہ ایک ہی سانس میں طلاق طلاق ، چھ سات مرتبہ کہا ۔ صورت مسئولہ میں طلاق مغلظہ واقع ہو گئی، اب نہ رجعت کا اختیار باقی رہا، نہ دوبارہ نکاح کی گنجائش رہی ، جب تک کہ حلالہ نہ ہو جاتے کوئی جواز کی صورت نہیں ۔


উত্তর  প্রদানে

ফতোয়া বিভাগ

জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.